বাবুলিয়া জে, এস, মাধ্যমিক বিদ্যালয়
সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ সাতক্ষীরার অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী একটি বিদ্যাপীঠ বাবুলিয়া জে, এস,
মাধ্যমিক বিদ্যালয়। ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয়টি
সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে সুনামের সাথে
তার শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সাতক্ষীরা শহর থেকে মাত্র ৫ কি.মি. উত্তর পশ্চিমে বাবুলিয়া বাজারের পাশে বিদ্যালয়টি অবস্থিত। বিদ্যালয়টিতে আছে পর্যাপ্ত শ্রেনীকক্ষ,
লাইব্রেরী,
বিজ্ঞান ভবন, কলা ভবন,
নামাজ ঘর, প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, শ্রেনী শিক্ষকদের কক্ষ, সুপরিসর খেলার মাঠ ইত্যাদি।
বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালঃ ১৮৮৩ খ্রিষ্টাব্দ।
বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতার জীবনীঃ
প্রতিষ্ঠাতার নামঃ রাওসাহেব ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী চৌধুরী।
জন্ম সালঃ- ১৮৫৩সাল
পিতার নামঃ- শ্রীনাথ
মাতার নামঃ- জয়মনি
সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ ১৮৫৩ সালে সেপ্টেম্বর মাসে বাবুলিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে পিতা শ্রীনাথের ঔরসে এবং মাতা জয়মনির গর্ভে তিনি জন্মলাভ করেন। তাঁর পূর্ব পুরুষেরা নবাবী আমলে এখানে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। তিনি বাল্যকালে নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। পরে তখনকার দিনে সাতক্ষীরায় অবস্থিত সাতক্ষীরা প্রাননাথ উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয়ে ভর্ত্তি হন। তখন কোন যানবাহন না থকায়,
প্রতিদিন তিনি পায়ে হেটে সাতক্ষীরায় যাওয়া-আসা করতেন। অতঃপর যথাসময়ে তিনি সাতক্ষীরা প্রাননাথ উচ্চ ইংরাজী বিদ্যালয়ে প্রথম বিভাগে এনট্রান্স পরীক্ষায় উত্তীর্ন হন। পরে তিনি উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য পাঞ্জাবে রুড়কী ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন। বিশেষ কৃতিত্বের সঙ্গে তিন বৎসর পর তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন।
কর্মজীবনঃ ত্রৈলোক্যনাথ কর্মজীবনে তদানীন্তন বৃটিশ সরকারের অধীন দ্বিতীয় আফগান যুদ্ধে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঝিলাম নদীর বুকে সেতু নির্মানের এক গুরু দায়িত্ব সততার এবং সফলতার সঙ্গে পালন করেন। এবং সম্মান স্বরুপ সরকারের নিকট থেকে "রাওসাহেব" উপাধি প্রাপ্ত হন। তাই তাঁর নাম রাওসাহেব ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী চৌধুরী। এই কর্মজীবনই তাকেঁ চিরস্মরনীয় করে রেখেছে। তিনি চাকুরীজীবনে যেখানেই থাকতেন না কেন সব সময় তাঁর মন দেশের অশিক্ষিত মানুষের জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকত। এজন্য এতদঅঞ্চলের অনাগত ভবিষৎ বংশধরগনের অন্ধকারময় মনের আকাশে শিক্ষার আলো ফুটিয়ে তোলার সংকল্প নিয়ে বাবুলিয়ার বুকে এই উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করলেন ১৮৮৩ সালে। মাতা জয়মনি ও পিতা শ্রীনাথের নামানুসারে এই উচ্চ বিদ্যালয়ের নামকরন হল বাবুলিয়া জে, এস,
মাধ্যমিক বিদ্যালয়।
সন্তান সমূহঃ
তাঁর চার পুত্র। প্রথম পুত্র পৃথ্বিনাথ। উচ্চ শিক্ষা সমাপ্ত করে বারাসাতে ডেপুটি ম্যাজিষ্ট্রেটের পদ অলংকৃত করেন। ২য় পুত্র অবনীনাথ প্রথম স্বদেশী আন্দোলনে যোগদান করে বৃটিশ সরকারের রাজরোষে নিপতিত হয়ে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। কিন্তু বৃটিশ সরকার তাকে ধরে রাখতে সামর্থ হয়নি, আলীপুর সেন্ট্রাল জেলের জানালা ভেঙ্গে তিনি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে এক মুক্তজীবন লাভ করেন। শোনা যায়, ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি নাকি রাশিয়ার একজন প্রখ্যাত সেনানায়ক রুপে সৈন্য পরিচালনা করেন। তৃতীয় পুত্র ক্ষিতিনাথ একজন বিলেত ফেরৎ ইঞ্জিনিয়ার ও ৪র্থ পুত্র তপতীনাথ একজন প্রখ্যাত জ্যোতিষবিদ। আজ আর তাঁরা কেহই জীবিত নাই।
প্রাথমিক ব্যয়ভারঃ প্রথমে ত্রৈলোক্যনাথ এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করে অশেষ দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে এর ব্যয়ভার তিনি নিজেই বহন করেন। পারিশ্রমিক এর বিনিময়ে জোর করে পিতা-মাতার নিকট থেকে ছেলে এনে স্কুলে ভর্তি করতেন। এবং তাদের ব্যয়ভার নিজেই বহন করতেন। তিনি বলতেন "This school is my life, and my life is this
school" তার উজ্জল দৃষ্টান্ত পাই তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্রের মৃত্যুতে। পুত্র শোকে অধীর ত্রৈলোক্যনাথ স্কুলে এসে ছেলেদের বলেছিলেন,
"আমার এক পুত্র মারা গেছে সত্য, কিন্তু আজ দেখছি এখানেই আমার শত শত পুত্র জীবিত, আমার আর কোন দুঃখ নেই আমার"। এ মহান বানী শুধু তাদেঁর মুখে শোনা যায যাঁরা মহান ও আকাশের মত উদার। ত্রৈলোক্যনাথের পরম সহায়ক হিসাবে তাঁর পাশে এসে দাড়িয়েছিলেন তাঁর বিদুষী সাধ্বী স্ত্রী।
শেষ জীবনঃ শেষ জীবনে ত্রৈলোক্যনাথ কানে কম শুনতেন,
এত কম শুনতেন
যে বধির যন্ত্র ছাড়া তিনি কিছুই শুনতে পেতেন না। এক সময় উকড়ায় তাদেঁর জমিদারী দেখাশুনা করে ফিরছিলেন,
পথে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ইতিমধ্যে পেছন দিক থেকে ট্রেন এসে তাকেঁ ধাক্কা দেয়, সাথে সাথে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। অনতিবিলম্বে তাকেঁ কলকাতায় সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু সেই আঘাত আর তিনি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। অবশেষে
১৯১৬ সালের ১৭ই মার্চ তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।
“মানুষ চলে যায় আসেনা আর ফিরে,
স্মৃতি তার রয়ে যায় এ অবনী পরে”
তিনি আজ আমাদের মাঝে আর বেচেঁ নেই। কিন্তু তাঁর সাধের এই বিদ্যাপীঠ আজও আমাদের মাঝে তাকেঁ চিরস্মরণীয় করে রেখেছে।
শিক্ষাবৃত্ত তথ্যসমুহঃ বাবুলিয়া জে, এস, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে বিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে বিভিন্ন মেয়াদে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়। এবং শ্রদ্ধেয় ওয়াজেদ মাসুমা স্মৃতি বৃত্তি তহবিল,
শ্রদ্ধেয় আনোয়ারুল ইসলাম স্মৃতি বৃত্তি তহবিল এবং শ্রদ্ধেয় ওয়াজিহার রহমান স্মৃতি বৃত্তি তহবিল থেকে প্রতি বছর ৬ষ্ঠ শ্রেনী থেকে ১০ম শ্রেনীর ১ থেকে ১৪ রোলধারী ছাত্র/ছাত্রীদের মাঝে অর্থ্যাৎ ৫টি শ্রেনীর সর্বমোট ৭০জন ছাত্রছাত্রীর মাঝে মাসিক ভিত্তিতে বৃত্তি প্রদান কর হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সরকার প্রদত্ত বৃত্তি প্রদান করা হয়।